কচিখালী সমুদ্র সৈকত – (Kochikhali Sea Beach)

সুন্দরবনের কটকা নদীর পূর্ব দিকে অবস্থিত প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত কচিখালী সমুদ্র সৈকত (Kochikhali Sea Beach) একটি চমৎকার দর্শনীয় স্থান। সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি এখানে আছে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং পর্যটন কেন্দ্র। সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের এই সৈকতটিকে বলা হয় ভয়ংকর সুন্দর! কারণ সৈকতে পৌঁছাতে হলে বঙ্গোপসাগরের মোহনার খরস্রোতা কটকা নদী ও সুন্দরবনের ভিতরের প্রায় ৩ কিলোমিটার বুনো পথ পাড়ি দিতে হয়। এই পথে প্রায়ই হরিনের পাল, বন্য শুকর এবং বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যায়।

ডাঙ্গায় নানা জাতের হরিণ, গাছে গাছে হাজার রকমের পাখি। আকাশেও মুক্ত ডানা মেলে পাখপাখালির ওড়াউড়ি। জলে ডলফিন আর কুমির-শুশুক মাঝে মধ্যেই ভেসে উঠছে। এসব দৃশ্য দেখলেই মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায়। সুন্দরবনে যে কোন পর্যটকই আসুক না কেন কচিখালী যাওয়ার একটা সুপ্ত বাসনা তাঁদের মনে থেকেই যায়।

কিন্তু বেশিরভাগ পর্যটকের সাধ্য হয় না মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কচিখালী দেখার। কারণ মংলা থেকে লঞ্চে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লাগে এখানে আসতে। কাঠের ট্রলারে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। তাছাড়া বন বিভাগ কাঠের ট্রলারে সেখানে কোন পর্যটক যেতে অনুমতি দেয় না। যে কোন নৌযানেই আকাশ ছোঁয়া ভাড়া। সুন্দরবনে প্যাকেজ ট্যুরে সেখানে যাতায়াতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপরেও কচিখালীতে পর্যটকের অভাব নেই।

দেশের নানা এলাকা থেকে দল বেঁধে এখানে আসছেন। কয়েকজন মিলে লঞ্চ ভাড়া করলে কিছুটা সসত্মায় তাদের ভ্রমণ হয়। বেশির ভাগ পর্যটকই এভাবে কটকা-কচিখালী গিয়ে থাকেন। বিদেশী পর্যটকরা অবশ্য সুন্দরবনে এলে কটকা-কচিখালী যাবেনই। কারণ এখানকার সৌন্দর্য বনের আর যে কোন পর্যটন কেন্দ্রের চেয়ে বেশি সুন্দর।

এডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য কচিখালী অভয়ারণ্যে প্রবেশের রাস্তাটি একটি আদর্শ জায়গা। নৌকা থেকে নেমে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে যেতে হয় বনের গভীরে। কাঙ্ক্ষিত কচিখালী সমুদ্র সৈকতের দেখা মিলে বনের একদম শেষ সীমানায়। পশুর, সুন্দরী, কেওড়া, বাইন ও আমুর গাছের মতো নানা ধরনের বৃক্ষের রঙ্গিন ফুল ও ফলে সাজানো বনের গাছে গাছে আছে নানান প্রজাতির পাখির আবাস। আর বনের উত্তর-পশ্চিম দিকে চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, বানর, বন মোরগ, অজগর সাপসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর বিচরণ। আবার মাঝে মাঝে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারেরও দর্শন মিলে এই বনে

কচিখালীতে বাঘের আনাগোনা বেশি বলে জানান স্থানীয় জেলেরা। জেটি থেকে উঠে প্রথমেই বন কার্যালয় থেকে সোজা দক্ষিণে ঘন বন। ভিতরে মিঠা জলের পুকুর। এই বনের শেষ সীমনায় গিয়ে ঠেকেছে সমুদ্র সৈকত। পশ্চিম পাশে ঘন বনে হরিণ, শুকর, বানর, বন মোরগ, কুমির, অজগর সাপসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী লক্ষ্য করা যায়। এই স্থান থেকে সামান্য উত্তরে একটি খাল বনের ভিতর দিয়ে সোজা পশ্চিমে চলে গেছে। একটু ভেতরের দিকে এ খালের জল সারা বছরই টলটলে স্বচ্ছ থাকে।

এছাড়া কটকা নদীর মোহনায় কুমির, শুশুক ও ডলফিনের মতো জলজ প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়। কচিখালী সমুদ্র সৈকতের লবনাক্ত জল কটকা নদীর সাথে গিয়ে মিশেছে। ম্যানগ্রোভ বন, ফার্ন এবং ৪০ ফুট উঁচু ওয়াচ টাওয়ার, চোখজুড়ানো সবুজের সমারোহ এবং সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়ে কচিখালী সমুদ্র সৈকতের বুনো সৌন্দর্য পর্যটকদের রোমাঞ্চিত করে।

কচিখালী সমুদ্র সৈকত ভ্রমণের সতর্কতা

❑ কচিখালীর ঢেউ সবসময়ই পরিবর্তনশীল এবং সৈকতে চোরাবালি রয়েছে। তাই সাগরে নামা থেকে বিরত থাকুন।
❑ বন ঘেঁষা খালের পানিতে কুমীর থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং এই ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
❑ বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়ে বনের প্রবেশ করুন।
❑ বনের মধ্য দিয়ে চলার সময় সাপ কিংবা বাঘের বেপারে সতর্ক থেকে চলাফেরা করুন।
❑ টুরিস্ট গাইডের দেখানো পথ ছাড়া নিজেদের ইচ্ছামত চলাচল করবেন না।
❑ বনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে উজ্জল রঙের পোশাক এড়িয়ে চলুন।
❑ সন্ধ্যার হবার আগে নিরাপদ স্থানে ফিরে যান।

← New Article
THE SUNDARBAN 

THE SUNDARBAN 

Old Article →
জামতলা সমুদ্র সৈকত – (Jamtola Sea Beach)

জামতলা সমুদ্র সৈকত – (Jamtola Sea Beach)